ধর্ষণ ও জনতা
সম্প্রতি ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত চার যুবকের পুলিশি এনকাউন্টারে
মৃত্যুতে অধিকাংশ দেশবাসীই উল্লসিত। সকলেই সন্তুষ্ট এই ভেবে যে, এইবার অপরাধীরা সঠিক
সাজা পেল। তারাই প্রকৃত অপরাধী কিনা, না সেই বিষয়ে কারুর মনে কোন সংশয় নাই। সংশয় নাই
কারণ হাদ্রাবাদের এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট পুলিশ বাহিনী এই চার যুবককেই প্রকৃত অপরাধী
বলে ঘোষণা করেছে। মানুষ পুলিশের ঘোষণাকেই আদালতের রায়ের সমগোত্রীয় বলে ধরে নিয়েছে।
তাই এনকাউন্টারে অভিযুক্তদের মৃত্যু জনতার চোখে অপরাধীদের সঠিক শাস্তি বলেই মনে হয়েছে।
বিশেষ করে হায়দ্রাবাদের সেই পশু চিকিৎসক তরুনীর মৃত্যুতে দেশব্যাপি তুমুল বিক্ষোভের
পর এই এনকাউন্টারকেই মানুষ তাদের বিক্ষোভের জয় বলেই মনে করেছে।
ঠিক এই ঘটনার পরপরেই উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বিধায়কের বিরুদ্ধে
ধর্ষণকাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে আদালতের রায়ে। এবং দোষী সাব্যস্ত বিধায়কের যাবোজ্জীবন
সাজাও ঘোষণা করা হয়েছে। এই সেই বিধায়ক যার বিরুদ্ধে অভিযোগকারিনী ধর্ষিতাকে মেরে ফেলার
জন্য চক্রান্ত করার অভিযোগও রয়েছে। যে চক্রান্তে অভিযোগকারিনীর দুই আত্মীয়ার মৃত্যুও
হয়েছে। মারাত্মক ভাবে আহত হতে হয়েছে অভিযোগকারিনী তাঁর উকিলকেও। প্রায় মৃত্যুর দরজা
থেকে ফিরে এসেছেন তাঁরা দুজনেই দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে। অভিযোগ রয়েছে বিধায়কের
প্রভাব খাটিয়ে ধর্ষিতার বাবকে পুলিশি হেফাজতে পিটিয়ে মেরে ফেলারও। এহেন প্রভাব প্রতিপত্তিশালী
দুর্বৃত্ত বিধায়কের জন্য মাত্র ১৪ বছরের কারাদণ্ড?
যে উত্তাল বিক্ষোভ হায়দ্রাবাদের পুলিশি এনকাউন্টারকে দুহাত
তুলে অভিনন্দিত করেছিল, সেই উত্তাল বিক্ষোভ মাত্র ১৪ বছরের কারাদণ্ডকে মেনে নিল কোন
জাদুবলে? নাকি, রাস্তাঘাটের সাধারণ ধর্ষক আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংসদ বিধায়ক ধর্ষকদের
অপরাধের মাত্রা ভিন্ন রকমের? যে জনতা সাধারণ ধর্ষকের সাজার দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ
দেখায়, সেই জনতাই রাজনৈতিক নেতারা ধর্ষণের দায়ে ধরা পড়লেও ঘরে বসে থাকে কোন জাদুতে্!
কপিরাইট পোস্টমর্টেম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন